ফেনী
বুধবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:৩৩
, ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৮৫

সোনাগাজীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ

ফেনীর সোনাগাজীতে প্রচন্ড দাপদাহে, আবহাওয়া ও ভাইরাস জনিত কারণে ডায়রিয়া ও  নিউমোনিয়াসহ ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর ও পেটব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ছয়দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮৫জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু, বৃদ্ধ ও নারী। গত ২৪ ঘন্টায় এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫জন রোগিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরম আবহাওয়া ও ভাইরাস জনিত কারনে শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। ছয়দিনে তিন শতাধিক ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। এদের মধ্যে দুইশতাধিক রোগিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদেরকে শুস্ক স্থানে সাবধানে এবং বৃষ্টির পানি থেকে দুরে রাখাসহ সবাইকে খাবারের ক্ষেত্রে ও সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনের ঠান্ডা -গরম, হঠাৎ বৃষ্টি আর ব্যাপসা আবহাওয়াসহ ভাইরাস জনিত কারণে সোনাগাজীতে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে । ডায়রিয়ায়-নিউমোনিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮৫জন বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবন্ধন বইয়ের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় ৩০জন ও নিউমোনিয়ায় ৩৫জন ও জ্বরে আক্রান্ত ৮৫জন রোগীকে ভর্তি করা হয়।এর মধ্যে শিশুর সংখ্যায় বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় ও নিউমোনিয়ায় এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫২জন রোগী ভর্তি রয়েছে।মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে ১৬জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভর্তি থাকা রোগির মধ্যে জনই শিশু।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ইসমাঈল হোসেন ও সাদেকুল করিম বলেন, গত ছয়দিনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া এবং ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুইশতাধিক রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া গত ছয়দিনে একই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৮৫জন বৃদ্ধ-নারী ও শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৬জন রোগিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসাধীন চর চান্দিয়া গ্রামের চারমাসের শিশু তাওহীদুল ইসলামের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, রাতে খাবার শেষে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠে শিশুর কান্না দেখে তাঁর মা দুধ খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বমি ও পাতলা পায়খানা করে। এর কিছুক্ষণ পর থেকে ডায়রিয়া দেখা দেয়। ধীরে ধীরে ডায়রিয়া বাড়তে থাকায় দ্রুত হাসপাতালে এসে ভর্তি করেছেন।
চর খোয়াজ গ্রামের ছয়মাসের শিশু রেদওয়ানের বাবা আবদুর রহিম বলেন, জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদর থেকে বাড়িতে আসার পথে সিএনজির বাতাসে ও বৃষ্টির পানিতে একটু ঠান্ডা লেগে যায়। রাত থেকে তাঁর ছেলের শরীরে জ্বর দেখা দেয়। কান্নাকাটি করলে মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর হঠাৎ বমি করে। জ্বর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় সকালে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁর ছেলে জ্বর ও নিউমোনিয়া উভয় রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ও আরএমও আরমান বিন আবদুল্লাহ বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ঠান্ডা-গরমে ভাইরাস জনিত কারণে বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়া ‘রোটা’ ভাইরাসের জীবাণুর কারনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ শিশুকে সুস্থ্য করতে হাসপাতালে ভর্তি করে টিকা দিতে হয়। তিনি বলেন,  এসময় শিশুদেরকে সাবধানে শুস্ক ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখা। সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। যাতে করে তাদের শরীরে ঠান্ডা,গরম বা ভাইরাস জনিত কোন জীবাণু না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি আর ব্যাপসা গরম, বৈরী আবহাওয়াসহ ভাইরাসের আক্রমনে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও জ্বরের রোগির সংখ্যা বেড়ে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকট থাকলেও ভর্তি হওয়া ও বর্হিবিভাগে আসা রোগিদেরকে সেবা দিতে যথাসার্ধ্য চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ৫০শয্যার হাসপাতাল ৩১শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। তারপরও হাসপাতালে ২২টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চারজন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। ইতিমধ্যে অনেক রোগি সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!