সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমরা সাধারণত যে কাজটি করি তা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বুলানো। হোক সেটা ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইন্সটাগ্রাম।আগে যেখানে সকালে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া হতো, সেখানে এখন চোখ বুলানো হয় ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রামে। শুধু সকালেই নয়; দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত- যখনই সময় হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের একবার ঢুঁ মেরে আসতেই হবে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি কেন এত আকর্ষণ, তা কি কেউ কখনও ভেবে দেখেছেন?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের কারণে সামাজিক মাধ্যমগুলো এখন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। প্রতিদিনই এতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ব্যবহারকারী।
তাই দেখা যায়, দেশের মূলধারার গণমাধ্যম থেকেও ফেসবুক ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কোনো সংবাদ এড়িয়ে গেলেও ফেসবুকে কারও না কারও উদ্যোগে তা প্রকাশ হয়ে যায় এবং উঠে আসে আলোচনায়।
ফলে শুধু যে গণমাধ্যমের উৎস হয়ে উঠছে ফেসবুক তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের ওপর চাপও সৃষ্টি করা হয় প্রচার করার জন্য।
সম্প্রতি সাড়া জাগানো বরগুনার রিফাত হত্যা নিয়ে ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হয়। ফলে সবার তা নজরে আসে।
গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, সাম্প্রতিককালের সাড়া জাগানো অনেক খবর সবার আগে সর্বসাধারণের গোচরে এনেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম নয়।
সিলেটের কিশোর রাজন হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবার আগে সোচ্চার হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা। তাদের কারণেই গণমাধ্যম বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়।
এরপরই পুলিশ তৎপর হয় অভিযুক্তদের গ্রেফতারে কার্যকর অভিযান পরিচালনায়। এ মর্মন্তুদ হত্যাকাণ্ডের প্রধান হোতা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পর্কে জানতে পেরে তাকে শনাক্ত করে।
অপরদিকে নির্যাতনকারীরাও ঘটনাটি ভিডিও করেছিল ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশ্যে। পুরো ঘটনাটি দেশজুড়ে সাড়া জাগায়। অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার পেছনে নিঃসন্দেহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় একটি ভূমিকা ছিল।
কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শক্তিশালী হয়ে উঠছে তা সহজেই বোধগম্য। আজকাল প্রায় সবার হাতে আছে স্মার্টফোন। এ যন্ত্রটার ক্যামেরা বা ভিডিও অপশনে গিয়ে সামনে ঘটতে থাকা যে কোনো ঘটনার স্থির বা চলমান চিত্র ধারণ করে ফেলা সহজ। প্রায় সবাই সেটাই করছে, কবে কোন সাংবাদিক আসবে ঘটনার খবর জানতে সে আশায় বসে থাকছে না। ঘটনার ছবি বা ভিডিও এবং জানা তথ্য গরম গরম ফেসবুক টাইমলাইনে তুলে দিচ্ছে, সাংবাদিকদের জন্য আর অপেক্ষা করছে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ক্রমশ যে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এটা এখন অনিবার্য সত্য। তাই বলে দেশের প্রতিষ্ঠিত মূলধারার গণমাধ্যম-সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতারে রাতারাতি ধস নামবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ গণমাধ্যমের পেছনে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির নতুন নতুন শক্তি, যেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সীমাবদ্ধতার বড় জায়গা।
নিগার সুলতানা সুপ্তি : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



