ফেনী
রবিবার, ৩রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৪৯
, ৮ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বাঙালির অধিকার নিয়ে বঙ্গবন্ধু কখনও আপস করেননি-প্রধানমন্ত্রী

সৈয়দ আনাস পাশা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির দোসর ‘৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করার ধারাবাহিক অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তবে তৎকালীন পাকিস্তানের গোপন গোয়েন্দা রিপোর্টগুলোই সে চেষ্টাকে ভেস্তে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেওয়া ওইসব রিপোর্টই সাক্ষ্য দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বাঙালির অধিকার নিয়ে বঙ্গবন্ধু কখনও আপস করেননি।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে শুক্রবার বিকেলে লন্ডনে পৌঁছলে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী স্লোগানে স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। ক্লান্তিহীন প্রধানমন্ত্রী এ সময় সকলের খোঁজ-খবর নেন।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা হোটেল স্যুটে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে দীর্ঘক্ষণ তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা। আলোচনার প্রায় পুরো অংশই ছিল ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থের প্রকাশনার নেপথ্য কাহিনী।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় গ্রন্থের একটি কপি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, নেতাকর্মী সবাই যেন বইটি পড়েন। বইটি পড়লে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের অন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন আমাদের কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারলেও ইতিহাস কখনও চাপা দেওয়া যায় না, ইতিহাস সত্য ঘটনাগুলোই তার বুকে আগলে ধরে রাখে, মিথ্যা এখানে টিকে থাকতে পারে না।

গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশের গল্পের পাশাপাশি দল ও সরকারের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র, কোন কোন এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব ও নেতৃত্ব লাভের প্রতিযোগিতায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কামরানকে আটকাতে অনেকেই গোপনে ভূমিকা রেখেছেন বলে তার কাছে খবর আছে। নেতৃত্বের লোভে কোনো কোনো এলাকায় দলের এমপির বিরুদ্ধেও অপপ্রচার করছেন কেউ কেউ, এমন খবরও তার কাছে আছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সুলতান মাহমুদ শরীফ জানান, দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তির পরও প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের সময় দিয়েছেন। নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে গেলে তিনি সবার খোঁজখবর নেন।

তিনি বলেন, গ্রন্থটির প্রকাশনার নেপথ্যের কাহিনী বলার সময় প্রধানমন্ত্রী খুব উৎফুল্ল ছিলেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ কঠিন কাজ সম্পন্ন করার পর যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, গল্পের সময় সেই তৃপ্তির রেখাই ফুটে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর চোখে-মুখে।

সাক্ষাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হরমুজ আলী সমকালকে বলেন, নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনার সময় বাংলাদেশের বর্তমান আইজিপি জাবেদ পাঠোয়ারীর ভূয়সী প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাবেদ পাটোয়ারীকে গোপন নথিগুলো খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। খুঁজে খুঁজে সব নথি তিনি বের করেছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন সফলভাবে।

এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুক, সহ-সভাপতি জালাল উদ্দীন, উপদেষ্টা মন্ডলীর চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাশেম ও সহ-সভাপতি সামসুদ্দিন আহমদ মাস্টার প্রমুখ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তিন বাহিনী প্রধান, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

লন্ডনে দু’দিন যাত্রাবিরতির পর রোববার সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের পথে লন্ডন ত্যাগ করবেন তিনি। ফ্লাইটটি রোববার স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউ জার্সির নিউইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!