ফেনী
শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:০৪
, ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম:

তিন মিনিটের নৃশংসতা

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পোড়ানোর অপারেশনটি ছিল মাত্র তিন মিনিটের। স্বল্প সময়ে পুরো অপারেশন সফল করে বর্বরোচিত এই ঘটনায় অংশগ্রহণকারীরা। এর মধ্যে রাফীকে ডেকে নেওয়া, তাকে ছাদে নিয়ে যাওয়া, জাপটে ধরা, তার দু’হাত বাঁধা, গায়ে কেরোসিন ঢেলে ম্যাচ ঠুকে আগুন দেওয়া এবং দ্রত ছাদ থেকে (সাইক্লোন শেল্টারের ছাদ) নেমে যাওয়ার কাজটি করা হয়েছিল। মাত্র তিন মিনিটেই এই অপারেশনটি সফল করে মানুষরূপী পাষন্ডরা।

আলোচিত এই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য
জানা গেছে। পিবিআইর মহাপরিচালক ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, নূর উদ্দিন ও শামীম হত্যার পর ভারতে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল; কিন্তু সেই চেষ্টা তাদের সফল হয়নি। তার আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাফীর গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি তারা মাত্র তিন মিনিটেই ঘটিয়েছিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রাফীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর দাউদাউ করে জ্বলে উঠলেও স্বাভাবিক ছিল হত্যার উদ্দেশ্যে আগুন দেওয়া ছাত্রছাত্রীরা। এ ঘটনায় তারা তেমন বিচলিত ছিল না। রাফী যখন আগুনে পুড়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিল তা দেখেও তাদের মন গলেনি। খুব স্বাভাবিকভাবে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় তারা। এরপর হত্যায় অংশ নেওয়া তিন ছাত্র ও দুই ছাত্রী ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এলাকায় নানা কথা প্রচার করতে থাকে। তাতে ব্যর্থ হলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর দেখে নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। এমনকি তারা ঢাকায় এসে মিলিত হয়ে বান্ধবীর হত্যার বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার নাটকও সাজিয়েছিল। কিন্তু তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় দলের কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ার কারণে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, রাফীর গায়ে আগুন দেওয়ার আগের রাতে নূর উদ্দিন ও শামীমের উদ্যোগে মাদ্রাসার একটি হোস্টেলে গোপন বৈঠক করে তারা। সেখানে কে কী করবে তার তালিকাও করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা খুব ঠান্ঠা মাথায় রাফীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়। তারা সবাই ওই মাদ্রাসার ছাত্র ও ছাত্রী। রাফীকে তারা আগুনে পুড়িয়েছে বিষয়টি তাদের অভিভাবকদেরও জানায়নি। কিন্তু তলে তলে নানা পরিকল্পনা করতে থাকে। পুড়িয়ে হত্যার কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে হত্যাকারীরা। তারা মাদ্রাসার যৌন নিপীড়নকারী অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন মানববন্ধন ও মিছিলে অংশও নেয়। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে যে যার মতো করে এলাকা ছাড়ে।
পিবিআইর কর্মকর্তারা বলেন, এলাকা ছাড়ার পর তারা ঢাকায় মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। পরিকল্পনায় ছিল সংবাদ সম্মেলন করে নাটকের জন্ম দেবে; কিন্তু পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারই অংশহিসেবে তারা ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাশের দেশ ভারতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অন্যদিকে কাউন্সিলর মাকসুদ আলম গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য এলাকার থেকে পালিয়ে আসে ঢাকায়। সে প্রথমে ফকিরাপুলের আবাসিক হোটেল তাজমহল, পরে হোটেল আজমিরে ওঠে। সেখান থেকে কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়। এই মাকসুদ আলম ছিল মাদ্রাসার একজন গভর্নিং বডির সদস্য ও ঠিকাদার। তার সঙ্গে অধ্যক্ষের সখ্য থাকায় সেও এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে নানা ভ‚মিকা পালন করে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!