ফেনী
শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৬:০৭
, ১৪ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নুসরাত হত্যাঃ এখনো স্বপদে বহাল আ.লীগ নেতা রুহুল আমিন

সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার বাতিলকৃত গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে এখনো স্বীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেনি দলটি। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে গত বৃহস্পতিবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে ১৯ এপ্রিল শুক্রবার বিকালে সোনাগাজী পৌরসভাস্থ তাকিয়া রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে পিবিআই। যদিও আসামী পক্ষে আইনি সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কাজী বুলবুল আহাম্মদ সোহাগ ও রাফীর ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে দলটি। অথচ এই ঘটনায় আ.লীগ নেতা রুহুল আমিন জড়িত থাকায় গ্রেফতারের ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও তাকে দল থেকে বহিষ্কার না করায় তার খুটির জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রুহুল আমিন ১৯৯৭ সালে উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য পদে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। একই বছর সোনাগাজী ফরিদ সুপারমার্কেটের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল কবিরের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। ২০০১ সালে সৌদিআরব চলে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ২০১৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে ৪৪ নম্বর কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও ২০১৮ সালের শুরুতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় রুহুল আমিনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে জেলা আওয়ামীলীগ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে তাকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি হিসেবে ঘোষনা করে দলটি। সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সোনাগাজীতে চেয়ারম্যান পদে রুহুল আমিনকে জেলা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দিলেও কেন্দ্র থেকে বাদ পড়ে যান। ২০১৮ সালে বিতর্কিত এই আওয়ামীলীগ নেতা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সাথে আতাত করে গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে শিক্ষার্থীর পরিবার। ৩০ মার্চ সকালে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে সোনাগাজী জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে এই আওয়ামীলীগ নেতার একান্ত সহযোগিতা ছিলো বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছেন।
যৌন নির্যাতনের মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল ওই শিক্ষার্থীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে চার মুখোশধারী। এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করেন। আদালতে মামলার ৩নং এজাহার নামীয় শাহাদাত হোসেন শামীমের জবানবন্দিতে রুহুল আমিনের নাম উঠে আসায় সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ১৯ এপ্রিল গ্রেফতারের পর থেকে এখনো স্বীয় পদে বহাল থাকায় এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমিন রাফী হত্যাকান্ডে জড়িতসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগের এক নেতার সাথে সখ্যতা থাকায় এখনো স্বীয় পদে বহাল রয়েছে। অথচ আরো দুই আওয়ামীলীগ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এই আওয়ামীলীগ নেতা এখনো বহিষ্কার না হওয়া খুবই দু:খজনক।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম জানান, রাফীর ঘটনায় রুহুল আমিন সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!