ফেনী
বৃহস্পতিবার, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:২৮
, ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম:

ফেনীতে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা উধাও

ফেনীতে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন ঢাকা ব্যাংক ফেনী শাখার গোলাম সাঈদ রাশেব (৩৫) নামে এক কর্মকর্তা। ছুটিতে ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকার পর বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার ব্যাংকে ভিড় করে গ্রাহকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা হাতাশা হয়ে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের বড় বাড়ির মৃত আজিজুল হক ভূঁইয়ার ছেলে গোলাম সাঈদ রাশেব ঢাকা ব্যাংকের ফেনী শাখায় প্রায় ৯ বছর যাবৎ কর্মরত ছিলেন। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ফেনী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার (ক্রেডিট) পদে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় চাকুরির সুবাদে এখানকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আস্থাভাজনে পরিণত হন তিনি। এতে গ্রাহকরা তার কাছে চেক, নগদ অর্থ ও ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে থাকতেন বলে জানা গেছে।
পরে বিশ্বস্ততার সুযোগ কাজে লাগিয়ে চতুর ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম সাঈদ রাশেব অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ সমন্বয়ের কথা বলে ব্লাংক চেক সংগ্রহ করে। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হলে ১২ মার্চ ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার আখতার হোসাইন সরকার উর্ধ্বতনদের লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করেন। পরদিন ব্যাংক কর্মকতা সাঈদ অফিসে এসে সকাল সাড়ে দশটার পর বাইরে গিয়ে উধাও হয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। চেক উত্তোলনের ম্যাসেজ পেয়ে বৃহস্পতিবার দু’ একজন গ্রাহক ব্যাংকে অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানা গেছে, দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর গ্রামের মাহবুবুল হক রিপনের একাউন্ট থেকে হাওয়া হয়ে যায় ৩৪ লাখ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের অধিনে ব্যাংকের এ শাখায় ৫ কোটি টাকার ঋণ চলমান রয়েছে। ঋণ সমন্বয়ের কথা বলে দুটি ব্লাংক চেক নেন চতুর গোলাম সাঈদ রাশেব। পরে একাউন্ট চেক করে দেখা যায় এ দুটো চেক ব্যবহার করে টাকাগুলো উত্তোলন করা হয়েছে।
তার ছোট ভাই ফজলুল হক পলাশের মুনতাসির এন্টারপ্রাইজ নামীয় একাউন্ট থেকে ৪২ লাখ টাকা একই কায়দায় তুলে নেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক মাহবুবুল হক রিপন বলেন, সরলতার সুযোগ নিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম সাঈদ রাশেব। তিনিসহ ব্যাংকের উপস্থিত অন্য গ্রাহকরা ঠিক কতজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমন তথ্য দিতে না পারলেও ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ফেনী শহরের ভিতরের বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী অজয় কুমার বণিক’র থেকে ৭০ লাখ টাকা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাচ্চুটি গ্রামের মোশাররফ হোসেন মজুমদারের ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পর্যন্ত টাকা খোয়া গেছে মর্মে প্রায় ১৫জন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে হিসেবে ব্যাংকিং লেনদের মাধ্যমে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে গোলাম সাঈদ রাশেবের সাথে অনেক গ্রাহকের ব্যক্তিগত লেনদেন রয়েছে বলে অনেক গ্রহক মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্যাংকের ফেনী শাখার ম্যানেজার আখতার হোসাইন সরকার জানান, ঠিক কতটি একাউন্ট থেকে কত টাকা উত্তোলন হয়েছে এটি বলা মুশকিল। গ্রাহকরা মৌখিক ও লিখিতভাবে জানাচ্ছেন। ঢাকা থেকে আইটি এক্সপার্ট আসছেন। তাদের মাধ্যমে বিষয়টি চিহ্নিত করা যাবে। প্রধান কার্যালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক কথা বলে বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তি করার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!