ফেনী
শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:২২
, ১৪ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সুরঃ কার লাভ, কার ক্ষতি….!

নাজিম সরকারঃ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ২০১৫সালের পরমানু চুক্তি থেকে সরে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে আবারও যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শতাব্দীকাল ধরেই মধ্যপ্রাচ্য একটি জীবন্ত যুদ্ধক্ষেত্র। কে কখন কার পক্ষ নিয়ে লড়ছে; নির্ণয় করাই সবচেয়ে দুরহ কাজ। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এখন দুইটি অংশে বিভক্ত- শিয়া ও সুন্নি। সুন্নিদের নেতৃত্ব দানকারী সৌদি আরব চায় ইরানের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে। আবার ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েলও চায় ইরানকে রুখতে। কিন্তু সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের পক্ষে কখনোই সরাসরি ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়ানো সম্ভব নয়। কারন ইরানের সাথে যুদ্ধ মানেই সৌদি রাজবংশের পতন এবং ইহুদীবাদী ইসরায়েলের পরাজয়। তাই মুসলিমদের দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম হয়েও সৌদি রাজবংশ এখন মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদীবাদী ইসরায়েলের সবচেয়ে পরম বন্ধু। শুধুমাত্র রাজবংশকে টিকিয়ে রাখতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে দাড়িয়েছেন বাদশাহ সালমান ও তার পুত্র।

বিশ্বের তৃতীয় ব্যয়বহুল সেনাবাহিনী রয়েছে সৌদিআরবের এবং মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমানবিক অস্ত্রধারী সেনাবাহিনী রয়েছে ইসরায়েলের। তবু সৌদি আরব কিংবা ইসরায়েল উভয়েই ইরানের সাথে সরাসরি সংঘাতে যেতে চায় না। কারন ইরানের সাথে যুদ্ধ মানেই মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রের পরিবর্তন। কিন্তু সৌদি রাজবংশ এবং ইসরায়েলী ভূখন্ডের জন্য ইরানের অগ্রযাত্রা সবচেয়ে বড় হুমকি। তাই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে সৌদি আরব চায় ইরানকে একঘরে করে রাখতে, আবার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা লবিস্টদের কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলও চায় ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে অবরুদ্ধ রেখে ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে দমিয়ে দিতে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পরে যুক্তরাষ্ট্র তিন দশক ধরে ইরানকে অবরুদ্ধ রেখেও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমাতে পারে নাই। তাই অবরোধ নয় সৌদি আরব এবং ইসরায়েল চায় ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্র হামলা করুক। কট্টর জাতীয়তাবাদী ডোনাল্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের কথামত পরমানু চুক্তি থেকে সরে আসলেও, সৌদি আরব কিংবা ইসরায়েলের কথায় ইরানে হামলার মত হঠকারী স্বীদ্ধান্ত নিবেন এমনটা আশা করা ভুল।

অপরদিকে পাকিস্থান, আফগানিস্তান এবং ইরাকের সুন্নিদের কাজে লাগিয়ে সৌদিআরব চায় ইরানের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে। ইরানের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র আশির দশকের মত আবার উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসন, আয়াতুল্লাহ খামেনীর প্রতি জনগনের আস্থা এবং ইরানের অভ্যন্তরে আমেরিকার পছন্দের কোন শক্তি না থাকায়, সেই আশাও দুরাহত। মধ্যপ্রাচ্যের ১৪টি দেশে আমেরিকার সামরিক স্থাপনা রয়েছে। ইরানের সাথে যুদ্ধে প্রতিটি সামরিক ঘাটি আক্রান্ত হবে। “আমেরিকা ফার্স্ট” শ্লোগান দেয়া ডোনাল্ট ট্রাম্প চাইবেন না, মধ্যেপ্রাচ্যে আমেরিকার ট্রিলিয়ন ডলারের স্বার্থ বাদ দিয়ে ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়াতে। যুগ যুগ ধরে গড়ে তোলা আমেরিকান সাম্রাজ্য, মাত্র একটি স্বীদ্ধান্ত সেই সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে পারে। কারন মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইরানী মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে পিছপা হবে না। ইরানের সাথে যুদ্ধ মানেই সেই যুদ্ধে ছড়িয়ে পড়বে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে। আমেরিকার প্রতিটি সামরিক ঘাটিতে হামলা করার সামর্থ ইরানের রয়েছে। ইরানের হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি, ফিলিস্তিনের হামাস এবং সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের নয়া পরাশক্তি তুরষ্ক দাড়াবে ইরানের পক্ষে। দীর্ঘদিনের মিত্র ইরানকে বাচাতে এগিয়ে আসবে রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বিশ্বশক্তিরা। রুপ নিতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে।

অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার শক্তিক্ষয় চীনকে এনে দিতে পারে বৈশ্বিক নেতৃত্ব। ৭০ বছর পর বিশ্বের নেতৃত্ব হারাতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তাই যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চাইবে না, ইরানের সাথে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে। আবার ইসরায়েল এবং সৌদি আরব চায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা করুক ইরানে। তাই ডোনাল্ট ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের খুশি রাখতে পুরানো অবরোধ অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছেন। আমেরিকার ক্ষতি করে ইসরায়েল কিংবা সৌদিআরবের লাভ নিশ্চয় ডোনাল্ট ট্রাম্প চাইবেন না। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে অবরোধ সহ্য করা ইরান এখন জানে কিভাবে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হয়।

নাজিম সরকার
সহযোগী সম্পাদক
ফেনীর কথা ডটকম

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!