ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:০৫
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

ডিজিটাল পদ্ধতিতে আসামীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন

সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতি পাওয়ার পয়েন্টে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ঘটনার তথ্যসমৃদ্ধ প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই’র পরিদর্শক মো. শাহ আলম। মঙ্গলবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে আসামীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: শাহ আলমের বাকী অংশ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার ১০টি আলামত আদালতকে বুঝিয়ে দেন তিনি। পরে পাওয়ার পয়েন্টে প্রজেক্টরের মাধ্যমে রাফীর দেওয়া জবানবন্দির অডিও, ভিডিও এবং আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনের মধ্যকার কথোপকথন আদালতে উপস্থাপন করেন। পরে তার আংশিক জেরা শুরু হয়। আদালত আজ বুধবার তদন্তকারী কর্মকর্তার বাকী অংশ জেরার দিন ধার্য করেন। ঢাকা থেকে আসা আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুখ আহমেদ গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৪ দিন ধরে যেভাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা সাক্ষ্য আইনের ২৬ ধারার পরিপন্থী। তিনি চার্জশীট দেখে দেখে দাড়ি, কমা পর্যন্ত আদালতে বলেছেন। সাক্ষ্য আইনের ১৫৯ ধারায় সাক্ষী শুধুমাত্র জেরার সময় কেস ডকেট দেখে সংখ্যা, কারও নামসহ সীমিত জিনিস দেখার বিধান রয়েছে। চার্জশীট দেখে দেখে দাড়ি-কমা পর্যন্ত বলায় আদালতের সময় নষ্ট করেছেন। তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেক্টরের মাধ্যমে আসামীদের সম্পৃক্ততার তথ্যাদি আদালতে উপস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি মামলায় একজিভিট হবে না। শুধুমাত্র ঘটনার বিষয় আদালতে উপস্থাপন করা। এর পরেও আদালত এটিকে একজিভিট করেছে। যা ন্যায় বিচার পরিপন্থী। বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলমের জবানবন্দি শেষে রাফী হত্যা মামলার আগে ও পরে আসামিরা হত্যাকান্ডে অংশ নিয়ে যে উল্লাস করেছে এবং তাদের কথোপকথন ও রাফীর জবানবন্দিও ভিডিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বিচারককে দেখান। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রথম মামলা; যার হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করা হয়েছে। ফেনী জজ আদালতের পিপি এডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানিয়েছেন, ৩৭ তম কার্য দিবসের মধ্যে ৯২ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ পিবিআই তদন্তকর্মকর্তা শাহ আলমের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার মাধ্যমে মামলাটি অনেকদুর এগিয়ে গিয়েছে। জেরা শেষে যুক্তিতর্ক শুরু হবে। গত ২৮ মে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০) কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়। ২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!