ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:৪০
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নুসরাত হত্যা মামলায় ঢামেকের ৩ চিকিৎসক ও সিনিয়র নার্সের সাক্ষ্যগ্রহন

ফেনীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় এবার সাক্ষ্য দিয়েছেন ঢামেকের ৩ চিকিৎসক ও সিনিয়র স্টাফ নার্স।বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এই সাক্ষ্য দেয়া হয়।

সুত্র জানায়, রাফী হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের ডা. ওবায়দুল ইসলাম, ডা. একেএম মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্চনা পাল এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এসময় আদালতকে ডা. ওবায়দুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৬ এপ্রিল বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ডা. একেএম মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্চনা পালের সামনে নুসরাত জাহান রাফীর মৃত্যুকালীন জবানবন্ধি লিপিবদ্ব করি ।উক্ত জবানবন্ধি আমার নিজ হাতে লিখা ও তাতে স্বাক্ষর আছে এবং রাফীর টিপসই আছে।

এদিকে আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে ডা. একেএম মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্চনা পাল ডা. ওবায়দুল ইসলামের সাক্ষ্য প্রদানকালে দেয়া বক্তব্যের প্রতি একমত পোষণ করেছেন।

ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ১১ এপ্রিল পুলিশ কনস্টেবল রমজান আলী নুসরাত জাহান রাফীর লাশ নিয়ে আসলে আমার সহকর্মী ডা. সজিব বিশ্বাস ও ডা. জান্নাতুল ফেরদৌসের সহযোগিতা নিয়ে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করি।পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করি।যাতে আমি ও আমার সহকর্মীরা স্বাক্ষর প্রদান করি।

পরে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন।

ফেনী জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহম্মদ জানান, ৯২ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাদীসহ ৮5 জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ আগষ্ট দিন ধার্য করেন।এইদিন চট্রগ্রাম সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ও হস্তলিপি বিশারদ মোঃ শামছুল আলমের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়।২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
গত ২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে রাফীর পরিবার মামলা দায়ের করেন।এরপর মামলা তুলে নিতে রাফীর পরিবারকে হুমকি দেয় সিরাজের ক্যাডার বাহিনী।ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল রাফীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে মুখোশধারীরা।এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।২১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ১২ জনই রাফী হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!