ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এজলাসের দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির কাঁটা তখন ঠিক১১টা। পুরো এজলাস কক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদের ব্যাপকভিড়।এজলাসের কঠাগড়ায় তখন আসামিরা ভীষন দু:শ্চিন্তাযুক্ত। ঠিক তখনই বিচারক মামুনুর রশিদ এসে এজলাসে তার নির্ধারিত চেয়ারে বসেন।খুব বেশি দেরি না করে দ্রুত নীল রঙের তিন পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত কপি পড়তে শুরু করেন। মাত্র ১২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের রাফী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন বিচারক মামুনুর রশিদ।
বৃস্পতিবার আলোচিত রাফী হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকালে এজলাসে অবস্থান করে দেখা যায় বিচারক প্রথমেই গণমাধ্যম ও প্রশাসনসহ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে রায়ের কপি পড়তে শুরু করেন। রায় ঘোষনার মাঝেই আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, রাফী হত্যাটি ছিল পরিকল্পিত। মিডিয়ার মাধ্যমে এই রাফী হত্যার ঘটনাটি জেনে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রতকরে। নারীত্বের মর্যাদারক্ষায় রাফীর তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ চিরকালের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।পাশাপাশি আসামিদের ঔদ্ধোর্ত,কালান্তরে মানবতাকে বঞ্চিত করার অপরাধ।তাই তাদের কঠোর শাস্তিপ্রাপ্য।
জনাকীর্ণ আদালত হলেও রায় পাঠ কালে শুনশান নিরব হয়ে যায় এজলাস। আসামিদের ভাগ্যে কি ঘটতে চলেছে তা নিয়েই সবার আগ্রহ তখন তুঙ্গে। বিচারক এজলাসে বসে শুরুতেই বলেন, আলোচিত এ মামলায় খুব অল্পসময়ে কঠিনকাজটি সম্পন্ন করতে পারায় মহান রাব্বুলআলআমিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।এরপর বিচারক ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ সিরাজের নাম উচ্চারণসহ তার অপরাধ ও ধারা অনুযায়ী বক্তব্য বলতে থাকেন।এরপর নুরউদ্দিন থেকে শুরু করে একে একে ১৬ আসামির প্রত্যেকের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত অপরাধের প্রমান সংক্রান্ত ধারা বর্ননা করেন।টানা ১২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে এসব বর্ননার শেষ অংশে বিচারক মামুনুর রশিদ চার্জশিটভুক্ত ওই ১৬ আসামির সকলের বিরুদ্ধেই মৃত্যুদন্ড আদেশ দেন।
এসময় আদালত পরিস্কারভাবে বলেন, ‘এই ১৬ আসামিদের সবাইকে ফাঁসি ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হলো।’এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করেন আদালত। সেই টাকা রাফীর পরিবারকে দিতে বলা হয়। রায়ের মাঝে ও আগে-পরে রাফী মৃত্যুদন্ডের বিষয় থেকে নানা পর্যবেক্ষণ ওতুলে ধরেন বিচারক মামুনুর রশিদ।