ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:৪৪
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বীভৎস হত্যাকান্ডের কথা মনে পড়ায় এজলাসে জ্ঞান হারান নুসরাতের মা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বীভৎস হত্যাকান্ডের কথা মনে পড়ায় এজলাসে রাফীর মা শিরিন আক্তার জ্ঞান হারান বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ। বুধবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করানো হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাফীর মা শিরিন আক্তার কিছুটা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে মাহমুদুল হাসান নোমান।

আদালত সূত্র জানায়, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে আদালতে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ১২ তম স্বাক্ষী রাফীর মাতা শিরিন আক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। এ সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে জেরা শেষে বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের এজলাসেই জ্ঞান হারান শিরিন আক্তার। এসময় তাকে দায়িত্বরত পুলিশ ও রাফীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান উদ্ধার করে ফেনী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়।
ফেনী জজ আদালতের পিপি এডভোকেট হাফেজ আহম্মদ জানান, রাফী হত্যা মামলায় শিরিন আক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। এ সময় স্বাক্ষ্যপ্রদানকালে শিরিন আক্তার আদালকে জানান, রাফীকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয় তার অনুসারীরা। মামলা তুলে না নেয়ায় সিরাজের নির্দেশে শাহাদাত হোসেন শামীম, নুর উদ্দিন, কামরুন নাহার পপি ও উম্মে সুলতানা পপিসহ আসামীরা যোগসাজসে রাফীকে পুড়িয়ে নির্র্মমভাবে হত্যা করে। আদালতের নিকট আসামীদের মৃত্যুদন্ড কামনা করেন তিনি। পরে তাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে জেরা করেন আসামী পক্ষের আইনজীবিরা। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
গত ২৮ মে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০) কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ৩০ মে সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়। ২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
গত ২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে রাফীর পরিবার মামলা দায়ের করেন। এরপর মামলা তুলে নিতে রাফীর পরিবারকে হুমকি দেয় সিরাজের ক্যাডার বাহিনী। ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল রাফীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে মুখোশধারীরা। এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। ২১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ১২ জনই রাফী হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!