ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:৩৮
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পুলিশী সিন্ডিকেট মুক্ত ফেনী

সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাটি প্রথমেই আত্মহত্যা বলে প্রচারের সূত্রপাত ঘটায় স্থানীয় পুলিশ। তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন এ ঘটনার মূলহোতা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে আঁতাত করে গুটি কয়েক গণমাধ্যমে রাফীকে আগুন পোড়ানোর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেন। তাতে ওসির পক্ষ নেন জেলার এসপি। পুলিশের এই সিন্ডিকেট ও অপকর্ম নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বিশেষ করে দৈনিক সময়ের আলোতে ওই সময়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে টনক নড়ে। ভেঙে যায় ফেনীর দীর্ঘদিনের পুলিশী অপকর্মের সিন্ডিকেট।পুলিশ সদর দফতরও সেইসব তথ্য আমলে নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে একে একে সরিয়ে দেয় এসপি জাহাঙ্গীর আলম থেকে শুরু করে জেলার কয়েক থানার ওসিসহ ৮ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে।
গতকাল ফেনীর নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালে রাফী হত্যা মামলার ১৬ আসামির মৃত্যুদন্ডের রায়ের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনায় এসে যায় রাফীর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলায় প্রত্যাহারকৃত সাবেক পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর সরকার এবং ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এসময় তারা বিতর্কিত দুই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেন।

জানা যায়, রাফীর হাত বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হলেও প্রথমে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন সোনাগাজীর তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। তার পক্ষে অবস্থান নেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ঘটনাটি নিয়ে যখন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম সরব হয়, এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নুসরাতের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন, তখনও বিস্ময়কর নির্লিপ্ততা দেখান এসপি জাহাঙ্গীর। সোনাগাজীতে ঘটনাস্থলে পর্যন্ত যাননি তিনি।এছাড়াও মামলায় সিরাজ উদ-দৌলাসহ কয়েকজনকে আসামি করতে এসপি-ওসি টালবাহানা করেন বলে রাফীর পরিবারের পক্ষ থেকে তখন অভিযোগ ওঠে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ সদর দপ্তরেও তিনি (এসপি) ওসির পক্ষে সাফাই গেয়ে চিঠি লিখেন। তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা প্রকাশ পেলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গণমাধ্যমে এসপি, সোনাগাজীর ওসিসহ পুরো জেলা পুলিশের নানা অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ওসি মোয়াজ্জেমকে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। আর এসপি জাহাঙ্গীর সরকারকে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় পুলিশ সদরদপ্তরে।দীর্ঘদিনের পুলিশী সিন্ডিকেট ও নানা অপকর্মের দায়ে ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ওসি) রাশেদ খান চৌধুরী, ডিআইও-১ শাহিনুজ্জামান ও সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেনকেও শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসপি জাহাঙ্গীর সরকার ফেনী ছাড়ার আগে এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বিভিন্ন তদন্তাধীন পেন্ডিং মামলায় দৈনিক সময়ের আলোর ফেনী প্রতিনিধি ও দৈনিক স্টার লাইনের স্টাফ রিপোর্টার মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারীসহ চার সাংবাদিকের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করে হয়রানির ফাঁসিয়ে দেয়া হয়।
#

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!