ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:৪০
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলমের জেরা অব্যাহত

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আগুনের তীব্রতা উল্লেখ নেই

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার সুরৎহাল প্রতিবেদনে আগুনের তীব্রতা উল্লেখ নেই বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম।বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আসামীপক্ষের আইনজীবীর জেরার জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আদালত সুত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় আসামীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তৃতীয় দিনের জেরা শুরু করেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করা হয়।আগামী রোববার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে আবারও তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করার কথা রয়েছে।

এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলমের কাছে আসামীপক্ষের আইনজীবী জানতে চান যে, ১১ এপ্রিল রাফীর যে সুরৎহাল সম্পন্ন হয়েছে, তার প্রতিবেদনে আগুনের তীব্রতা উল্লেখ আছে কিনা,জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা শাহআলম না সূচক জবাব দেন।এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তিনজন ডাক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড এর কাছে কোন আবেদন দিয়ে সুরৎহাল প্রতিবেদনে আগুনের তীব্রতা উল্লেখ নেই কেন তা জানার চেষ্টা করেছেন কিনা, জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম না সূচক জবাব দেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, যেখান(ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিট)থেকে রাফীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দী নেয়া হয়েছে সেখানে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি।
এছাড়া আসামী পক্ষের আইনজীবী মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসব প্রশ্নের জবাব দেন।

ফেনী জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহম্মদ জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলমের সাক্ষ্য প্রদান শেষে জেরা চলছে।

গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়।২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

গত ২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে রাফীর পরিবার মামলা দায়ের করেন।এরপর মামলা তুলে নিতে রাফীর পরিবারকে হুমকি দেয় সিরাজের ক্যাডার বাহিনী।ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল রাফীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে মুখোশধারীরা।এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।২১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ১২ জনই রাফী হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!