ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় বুধবার থেকে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হবে। সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই আদেশ দেন। এদিকে আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরীক্ষা করাকালে মামলার প্রধান আসামী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা নিজেকে নির্দোষ আখ্যায়িত করে রাফী হত্যার ন্যায় বিচার দাবি করেন।
সূত্র জানায়, সোমবার বেলা ১২টা থেকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আলোচিত এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়ে মধ্যাহ্ন বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়। এ সময় রাফীর ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা পিপিআই পরিদর্শক মো: শাহ আলমকে পুনরায় জেরা করেন আসামী হাফেজ আবদুল কাদেরের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু। পরে ফৌজধারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মোতাবেক চার্জশীটভূক্ত ১৬ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পরীক্ষা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মদ। অভিযোগ শুনে আসামিরা আদালতের নিকট বক্তব্য প্রদান করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আইনজীবীদের মাধ্যমে বিস্তারিত লিখিত বক্তব্য জমা দেন। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা আদালতকে জানিয়েছেন, ২৭ মার্চ রাফীকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা মামলায় আমি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলাম। পরদিন আমাকে আদালতে তুললে কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখতে আসলে তাদের নিকট দোয়া চেয়ে কারাগারে সাক্ষাৎ না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ৬ এপ্রিলের ঘটনায় আমাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ও ৫ দিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার বিষয়ে সিরাজ উদ-দৌলা কিছুই জানেন না বলে আদালতে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী রাফী হত্যার ন্যায় বিচার দাবি করেন তিনি।
আদালতে বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু ও আসামী পক্ষের আইনজীবী কামরুল হাসান, গিয়াস উদ্দিন নান্নু, সিরাজুল ইসলাম মিন্টু, আহসান কবির বেঙ্গল, ফরিদ উদ্দিন খান নয়ন, মাহফুজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৮ মে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০) কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়। ২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।