ফেনী
শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:৪৯
, ১৪ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাফী হত্যা মামলার বিচার চলবে  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলাটি  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে  মামলার পরবর্তী তারিখ ১০ জুন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার চার্জশীট শুনানীর জন্য ২১ আসামীকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ফেনীর সিনিয়র বিচারিক হাকিম মোঃ জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়।আদালত মামলাটি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করেন। এসময় মামলার বাদী
মাহমুদুল হাসান নোমান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবালসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বুধবার একই আদালতে মামলার চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম। কোর্ট পরিদর্শক গোলাম জিলানী  বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আলম কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)কে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এর নথি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ করে চার্জশীট দাখিল করে পিবিআই।৮শ ২২ পৃষ্ঠার এই চার্জশীটে এজাহারনামীয় ৮ জন এবং এজাহার বহির্ভূত তদন্তে প্রাপ্ত আরও ৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।সব আসামীর  মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপারিশ করেছে তদন্ত সংস্থা। ৯২ জন সাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১শ ৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাতজন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ১৬ জনের নামে চার্জশীট দাখিল করেছেন।মামলায় ২১ জন গ্রেফতার আছেন। আদালত ১৬ জনকে রেখে বাকি নুর হোসেন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্লাহ জনি, সাইদুল ও আরিফুল ইসলামকে চার্জশীট থেকে বাদ দিয়েছেন।এই পাঁচজনকে নিয়ে যদি এজহারকারীর আপত্তি থাকে, তবে আমরা নারাজি দেবো। তা না হলে পিবিআইয়ের এই চার্জশিট গ্রহণ করতে আদালতকে বলবো। ইতোমধ্যে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যাতে চার্জশিট পাঠানো হয়, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেবো। এদিকে আসামীদের কোর্ট  হাজতখানা থেকে আদালতে নেয়ার পথে তারা চিৎকার দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবী করেন।

গত ২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে রাফীর পরিবার মামলা দায়ের করেন।এরপর মামলা তুলে নিতে রাফীর পরিবারকে হুমকি দেয় সিরাজের ক্যাডার বাহিনী।ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল রাফীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে মুখোশধারীরা।এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।২১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, আবদুর রহিম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন্নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহাম্মদ, অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা,ইমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রান ও মহি উদ্দিন শাকিল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। তাঁরা ১২ জনই রাফী হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!