ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে সরকারদলীয় একটি চক্র।ফলে বিলীন হচ্ছে ৫ শতাধিক নিরীহ মানুষের ভিটেবাড়ি ও জায়গা জমি।ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারনে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের (নাপিত কোনা) নামক স্থানে মুহুরী নদী থেকে কয়েকমাস যাবত অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছে সরকার দলীয় একটি চক্র। সেখানে নদীর পাশে পরশুরাম উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের মিঝি বাড়ীর বাসিন্দা মো: এছাহাক,মো: ইসমাইল,মো:ইলিয়াছ ও মজুমদার বাড়ীর দেলোয়ার হোসেন,মনোয়ার হোসেন ও মো: শাহিনের প্রায় ১০০ শতক জায়গা ছিল। তারা ওই জায়গায় কিছু অংশে গাছ লাগিয়ে,
কিছু অংশে ক্ষেত খামার ও ফসল আবাদ করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু গত ৭ থেকে ৮ মাস ধরে মুহুরী নদীর পাশে এই সব নিরীহ মানুষের জায়গায় ড্রেজার মেশিনের পাইপ ডুকিয়ে ভোরিং করে বালু তুলে নিচ্ছে চক্রটি। ফলে নদীতে বিশাল ভাঙন দেখা দেয়।ক্রমান্বয়ে মানুষের জায়গা জমি নদী গর্বে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে নদীর একপাশে বিশাল বালুর স্তুপ গড়ে ওঠে। এসব বিষয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন দেখেও নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত সুত্র জানিয়েছেন, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমের নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সামছুল হক রাসেদ,সাধারন সম্পাদক মো: শামীম মজুমদার, উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক পলাশ,যুবলীগ নেতা সুমন,ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর ৫নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম গোলাপ, বাজার কমিটির সভাপতি জাগির হোসেন ও শাকিলসহ সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা মুহুরী নদী থেকে বে-আইনিভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। উল্লেখিত জায়গার মালিকগণ বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রটি।এই কারণে তাঁরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
সুত্রটি আরো জানায়, পাঁচ মাস আগে এই বিষয়ে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি পুলিশ নিয়ে স্পটে হাজির হলে বালু সিন্ডিকেট নেতারা পালিয়ে যায়।পরে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর তাঁরা আবার নদী থেকে ফের বালু উত্তোলন শুরু করে।বিষয়টি আবার জানালেও কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।
এদিকে পাশের গ্রাম দেডপাড়া, পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ শালধর বেকের বাজার সংলগ্ন মুহুরী নদী থেকে একই চক্রটি বালু উত্তোলন করে আসছে। ফলে নদীর পাশের গ্রাম দেডপাড়া ও রতনপুর অংশে বিশাল ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ৮০ বছরের বৃদ্ধ আমিনুর রহমানের বাড়ী নদী গর্বে বিলীন হওয়ার পথে, তিনি কান্না জনিত কন্ঠে জানিয়েছেন, আমার শেষ সম্বল এই ঘরটি কেড়ে নিচ্ছে তাঁরা। পাশে সালামত উল্যার বাড়িতে বাস করে ৬০ পরিবারের ৪শ মানুষ। আস্তে আস্তে যে হারে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেখানে এই দুটি বাড়ি নদী গর্বে বিলীন হয়ে যাবে। সরকারদলীয়রা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সাথে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না এসব অসহায় মানুষ।তারা জানান, এই এলাকায় গত ১০ বছরেও কোন ভ্রাম্যমান আদালতের টিমকে চোখে দেখিনি। এ যেন এক তান্ডব লিলায় মেতে উঠেছে নদী খেকোরা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোঃ
পলাশ জানিয়েছেন,দলীয় অনেকেই বালু উত্তোলন করে আসছে।অন্যরা আড়ালে থেকে গিয়ে চক্রান্ত করে এলাকার লোকজন দিয়ে তাদের গ্রুপের নাম পরিচয় বলে বেড়াচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এব্যপারে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম সময়ের আলোকে জানান,এই বিষয়ে আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। যেহেতু এখন বিষয়টি জানতে পারলাম সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।