ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:০৯
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মাদরাসায় সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেন সিরাজ উদ-দৌলা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। রোববার বিকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি্র সাবেক সদস্য ও কাউন্সিলর আবদুল হালিম মামুন এবং দপ্তরী ইউসুফ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ সোমবার মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসাইন, সোনাগাজী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিন ও ড্রাইভার নুরুল করিমের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।

আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে শেখ আবদুল হালিম মামুন বলেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক বৈঠকে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করি কিন্তু অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তা সরাসরি নাকচ করে দেন।এছাড়া অধ্যক্ষের কার্যালয় শিক্ষক মিলনায়তনের পাশ থেকে সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে যাওয়ারও বিরোধীতা করি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

এসময় সাক্ষ্য প্রদানকালে দপ্তরী ইউসুফ বলেন,ঘটনার দিন আলিম পরিক্ষার শুরুতে হল সুপারের জন্য চা আনতে গেলে আমি রাফীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনা জানতে পারি।এছাড়া তাকে উদ্বার করে হাসপাতালে নেয়ার সময়ও আমি দেখেছি।

মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হাজেফ আহম্মদ বলেন, আলোচিত রাফী হত্যায় আবদুল হালিম মামুন ও দপ্তরী ইউসুফের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।এসময় তাদের জেরা করেন আসামী পক্ষের আইনজীবীরা।এ পর্যন্ত ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেন।

এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়।

গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়।২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
গত ২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে রাফীর পরিবার মামলা দায়ের করেন।এরপর মামলা তুলে নিতে রাফীর পরিবারকে হুমকি দেয় সিরাজের ক্যাডার বাহিনী।ওই মামলায় সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল রাফীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে মুখোশধারীরা।এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উলে¬খ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।২১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ১২ জনই রাফী হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!