ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:২৪
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নিয়মিত প্রতিবাদ-মানববন্ধন করছে আসামিপক্ষ, আতঙ্কে পরিবার

নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মুক্তির দাবিতে আসামিপক্ষের কৌশলী তৎপরতা

আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তির লক্ষ্যে নানা কৌশলে তৎপর হয়ে উঠেছেন স্বজন ও অনুরাগীরা। বলা যায় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কৌশলে মাঠপর্যায়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রাফী হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর কয়েকদিন চুপচাপ ছিল আসামি পক্ষের লোকজন।

তবে গত কয়েকদিন ধরেই তারা রায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সোনাগাজীতে প্রতিবাদ মানববন্ধন করছে। রোববারও সোনাগাজীতে রায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে আসামিদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। আসামিপক্ষের লোকজনের এমন তৎপরতায় এখন ব্যাপক আতংক বিরাজ করছে নিহত রাফীর পরিবারে। পাশাপাশি রায় কার্যকর করা নিয়েও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিচ্ছে সংশয়। ইতোমধ্যে আদালত থেকে মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

জানা যায় রোববার সকাল ১০টায় চর সোনাগাজী উপজেলার চর ছান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ওলামা বাজার সড়কে রাফী হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর উদ্দিন, শাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, মামুন শরীফ ও মহি উদ্দিন শাকিলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে তাদের স্বজনরা। মানববন্ধনে আসামি জাবেদের মা লাইলী বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিম্ন-আদালত ফরমায়েশী রায় দিয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশাকরি উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাব।’

নুর উদ্দিনের বাবা আহসান উল্যাহ বলেন, ‘পিবিআই আত্মহত্যাকে হত্যায় রূপান্তর করেছে। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই। মামলার বাদী এবং সাক্ষীরা কোনো আসামির বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে চাক্ষুস প্রমাণ দিতে পারেননি। তবুও সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যা আমাদের হতবাক করেছে।’

মামুন শরীফের মা বলেন, ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও মামুনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরদিন ৭ এপ্রিল রাফীকে হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিল মামুন।’ ঘটনার সময় বাড়িতে মামুন কাজে ব্যস্ত ছিল বলে তিনি দাবি করেন।

ওই মানববন্ধনে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশি মিলে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিল। এর আগে শুক্রবার সকালে সোনাগাজী আল হেলাল একাডেমি রোডেও মানববন্ধন করে আলোচিত রাফী হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তির দাবি করা হয়। ঘটনার দিনের সোনাগাজী মডেল থানা ও পৌরসভার সিসি টিভি ফুটেজ গায়েবের অভিযোগ তুলে মানববন্ধনে বলা হয় আসামিরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেন মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি ও মাদ্রাসার বহিষ্কৃৃত প্রভাষক আফসার উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া হোসেন ইফাত। এর আগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি কামরুন নাহার মনির স্বামী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার পক্ষে নানা বক্তব্য তুলে ধরেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানববন্ধনের ব্যাপারে শুনেছি, তবে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশের বাধার মুখে তারা পৌরশহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে মানববন্ধন করেছে।

প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার অনুসারীরা। এরপর অগ্নিদগ্ধ রাফী ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল রাফীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!