ফেনী
শনিবার, ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:৩২
, ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
রাজাপুরে হিলফুল নূর ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র উপহার ফেনীতে বর্নাঢ্য আয়োজনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ফেনী বড় মসজিদের এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আ.লীগ আবার ফিরবে,জয়বাংলা উপজেলা-পৌর কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে চরদরবেশ ইউনিয়ন বিএনপির আনন্দ মিছিল নিজ দলীয় ত্যাগী-নির্যাতিত কর্মীর পাশে থাকায় ষড়যন্ত্রের শিকার বিএনপি নেতা আহবায়ক কমিটি দিয়ে ৫ বছর পার ফেনীর বিএনপির ফাজিলপুরে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন নানা আয়োজনে ফেনী মুক্ত দিবস পালিত ঢাকাস্থ ফাজিলপুর যুব কল্যাণের জিপিএ ৫ সংবর্ধনা আ.লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা তা জনগণই ঠিক করবে-ফখরুল

পরিশ্রম, সততায় শূন্য থেকে শিখরে- এ.কে.আজাদ

 

ঢাকা অফিস-পাঁচ ভাই আর চার বোনের বিশাল সংসার। আজাদ নামের ছেলেটির ওপর চাপ ছিল পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরার। ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর মা-বাবাও এ আশায় দিন গুনছিলেন। কিন্তু চাইলেই কি আর ভালো চাকরি পাওয়া যায়! চোখের সামনে দেখছিলেন, বছরের পর বছর চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বহু ছাত্র চাকরি জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে চাকরির আশা ছেড়ে ব্যবসায় নামেন আজাদ। শুরুতে লোকসান গুনলেও সেই ছেলেটি আজকের সফল শিল্পপতি এ. কে. আজাদ। পরিশ্রম ও সততায় উঠে এসেছেন শূন্য থেকে শিখরে।

রোববার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প শোনান দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। অনুষ্ঠানের পোশাকি নাম ‘ক্লাব কার্নিভাল’ হলেও প্রধান অতিথি এ. কে. আজাদের বক্তব্যের পুরোটা জুড়ে ছিল সাফল্যের পথে উঠে আসার গল্প।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ শিক্ষার্থীদের বলেন, পরিশ্রম ও সততা ছাড়া সাফল্য আসবে না। নিজেকে নিজেই গড়ে তুলতে হবে। হলভর্তি শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে শোনেন তার সাফল্যের মন্ত্রগাথা। একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে জেনে নেন, কীভাবে তারাও সফল হতে পারেন।

১৯৭৬ সালে এসএসসি পাস করেন এ. কে. আজাদ। কলেজে ভর্তির পর বামধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। ঠিক বক্তৃতা নয়, গল্প বলার ঢঙে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বীকার করেন, আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার কারণে দুবার তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দেননি। শেষে ১৯৮০ সালে পাস ক

এ. কে. আজাদ জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর দেখা দেয় থাকার সংকট। আবাসিক হল ছাড়া অন্য কোথাও থাকার জায়গা নেই। আসন সংকটে হলেও জায়গা নেই। ফ্লোরে ঘুমাতে হতো। একদিকে হলে আসন সংকট, অন্যদিকে স্নাতকোত্তর পাস করা শত শত শিক্ষার্থী চাকরি না পাওয়ায় হলে ‘দখল’ বজায় রেখেছেন। ফলে নতুন শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা নেই বললেই চলে। শেষে সমস্যার সমাধান হয় অন্যভাবে। সাবেক শিক্ষার্থীদের বিছানা-বালিশ বাইরে ফেলে দেয় একটি ছাত্রসংগঠন। হলে জায়গা মিললেও এ. কে. আজাদের মনে তখন আরেক দুশ্চিন্তা। দুই বছর পর তারও স্নাতক শেষ হবে। চাকরি জোগাড় করতে না পারলে তাকেও কি এভাবে হলছাড়া করা হবে! চাকরি না পেলে হল ছেড়ে বাসা ভাড়া করে থাকবেন কী করে!

তখন ১৯৮৪ সাল। শুরু হয় স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন। গ্রেফতার হন এ. কে. আজাদ। জেলে বসে খবর পেলেন, যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তাদের অনেকে এরশাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কেউ কেউ সামরিক সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, এই নীতিহীনতার সঙ্গে আর নয়। আর রাজনীতি করবেন না। জেল থেকে ছাড়া পেলে শুরু করবেন ব্যবসা।

২৩ দিন জেল খাটার পর মুক্তি পেলেন এ. কে. আজাদ। এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ওষুধ তৈরির ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সফল হতে পারলেন না। ১৯৮৫ সালে শুরু করেন গার্মেন্ট ব্যবসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কোটা সুবিধা পেলেন না তার মতো নবীন ব্যবসায়ীরা। তখনও গার্মেন্ট ব্যবসা পুরনোদের হাতে। সে সময় লোকসান হলো সাত লাখ টাকা। পুরোটাই ব্যাংক ঋণের। গার্মেন্টে তালা পড়ল। ভবন মালিককে ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছিলেন না।

গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ জানান, লোকসান করে সিদ্ধান্ত নিলেন, পুরনো ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে হবে। নবীন ব্যবসায়ীদের নিয়ে নামলেন কঠিন এই কাজে। ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করলেন। নির্বাচনে জিতলেন।

এ. কে. আজাদ জানান, এর পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যত দিন গিয়েছে, শুধু সামনের দিকে এগিয়েছেন। ব্যবসার পরিধি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত হা-মীম গ্রুপে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার। গত বছর ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে হা-মীম গ্রুপ। আগামী বছরে লক্ষ্যমাত্রা রফতানি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।

এখানেই থেমে যেতে চান না এ. কে. আজাদ। ৩৩ বছর আগে রাজনীতি ছাড়লেও এখনও সমাজবদলের স্বপ্ন দেখেন। গত বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ৫৫০ জন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকে চার বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বৃত্তি পাবেন। এবার এ সংখ্যা বাড়িয়ে ৭০০ করার ইচ্ছা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ. কে. আজাদ বলেন, ‘সমাজ ভালো না থাকলে তুমিও ভালো থাকবে না। সমাজ ভালো না থাকলে তোমার চাকরি, ব্যবসা কিছুই ভালো হবে না। তাই নিজেকে ভালো রাখতে সমাজকে ভালো রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

কার্নিভালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। বক্তৃতা করেন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খন্দকার মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম, আবুল খায়ের চৌধুরী প্রমুখ।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo