ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলার এজাহার নামীয় ৫ আসামী শিক্ষার্থীরা মধ্যে ৪জন গ্রেফতার হলেও ১জন এখনো পলাতক রয়েছে। এই ৫ শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার অনৈতিক সুবিধা পেয়ে নিজেদের অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পেলে। শনিবার বিকালে সোনাগাজী মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে, নুসরাত জাহান হত্যা মামলার ২ নং এজাহার নামীয় আসামী নুর উদ্দিন। উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে। তার পিতা কৃষি কাজ করেন। নুর উদ্দিন ও মাঝে মধ্যে পিতার সাথে কৃষি কাজে সময় দিতেন। সে ওই মাদ্রাসার ফাজিল ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী। এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিতি হলেও মাদ্রাসায় সে এক ভয়ঙ্কর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।
মামলার ৩নং আসামী শাহাদাত হোসেন শামিম চরচান্দিয়া ভূঞা বাজারের আবদুর রহমানের ছেলে। তার পিতা ছোট-খাটো ব্যবসায়ী হলেও সে এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। মাদ্রাসায় ফাজিল ২য় বর্ষের অধ্যয়নরত ছিলো। সেও অধ্যক্ষের ঘনিষ্ট ক্যাডার হিসেবে কাজ করতো।
আলোচিত এ মামলার ৫নং আসামী জোবায়ের আহাম্মেদ হাসপাতাল এলাকার (তুলাতুলি গ্রাম) আবুল বশরের ছেলে। সে মাদ্রাসার ফাজিল ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।
মামলার ৬নং এজাহার নামীয় আসামী জাবেদ হোসেন উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের রহমত উল্লাহর ছেলে। তার পিতা এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েকবার কারা ভোগ করেন তিনি।
ছফরপুর গ্রামের বাসিন্দা হফেজ আবদুল কাদের এ মামলার ৭ নং এজাহার নামীয় আসামী। সে ফাজিল ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার অপকর্ম ঢাকতে মাদ্রাসায় এই ৫ শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনের সমন্বয়ে একটি ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা তাকে বিভিন্ন অপকর্মে সহায়তা দিতো। বিনিময়ে অধ্যক্ষ সিরাজ তাদেরকে আবাসিকে ফ্রিতে থাকা খাওয়া, বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ ও প্রশ্নপত্র দিয়ে সহযোগিতা করতো। এছাড়া তাদেরকে মাসিক অর্থ দেয়াসহ বিভিন্ন সময়ে উপহার প্রদান করে অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে গড়ে তোলেন।
এছাড়া তারা বিভিন্ন পরিক্ষার সময় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১শ থেকে ২শ টাকা করে চাঁদা আদায় করতেন।
২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে।এ ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন শিক্ষার্থীর পরিবার। এরপর রাফির পরিবারকে মামলা তুলে নিতে অনবরত হুমকি দিয়েছিলেন অধ্যক্ষের সহযোগীরা। এবং কি এই ৫ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে অধ্যক্ষ মুক্তি পরিষদ গড়ে তোলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
৬ এপ্রিল ওই শিক্ষার্থীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে চার মুখোশধারী। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ ৮ জনকে আসামী করে থানায় রাফির পরিবার মামলা দায়ের করলে পুলিশ এই পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করে ১০ জনকে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।আদালত শুনানি শেষে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে হাফেজ আবদুল কাদের ছাড়া বাকী ৪জন গ্রেফতার হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ সিরাজের প্রলোভন ও অনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিয়ে এই ৫ শিক্ষার্থী নিজেদের অন্ধকার জগতে জড়িত পড়ে। তারা আবাসিকে থাকাকালীন মাদক সেবনও করতেন। বিষয়টি জেনেও অধ্যক্ষ নিরব ছিলেন। বর্তমানে নুসরাত হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততায় তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে মামলার সন্দেহজনক আসামী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুর হোসেন হোনা মিয়াসহ জড়িত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অনৈতিক সুবিধায় এই হত্যাকান্ডে অংশ নেয়।
ফজলুল করিম নামে মাদ্রাসা সংলগ্ন এক ব্যবসায়ী বলেন, এই ৫ শিক্ষার্থীর বখাটেপনায় শিক্ষার্থীরা অসহায় হয়ে পড়তো। বিষয়টি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জেনেও তাদের আস্কারা দিয়েছেন।
বর্তমানে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা কারাভোগ করছেন। রাফি হত্যা কান্ডের ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া তার এমপিও স্থগিত করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর।