ফেনী
রবিবার, ৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ২:৩৫
, ১০ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

স্বীয় পদে এখনো বহাল: আ.লীগ নেতার খুটির জোর কোথায়!

ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার মামলার এজাহার নামীয় আসামী সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল আলম (৪৫) কে এখনো স্বীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেনি দলটি। শুক্রবার রাতে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও আসামী পক্ষে আইনি সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কাজী বুলবুল আহাম্মদ সোহাগকে সাময়ীক বহিষ্কার করেছে দলটি। নুসরাতের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা মাকসুদ জড়িত থাকলেও তাকে দল থেকে বহিষ্কার না করায় তার খুটির জোর কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আহসান উল্লাহ ছেলে। মকসুদ আলম আলু ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সে আওয়ামী রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেন। এক পর্যায়ে ২০১০ সালের দিকে সোনাগাজী পৌর যুবলীগের সদস্য পদটি বাগিয়ে নেন।

এর পর ঠিকাদারী লাইসেন্স নিয়ে টেন্ডার বাণিজ্য, সালিশ বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হন। ২০১৬ সালে পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে পৌর নির্বাচনে দলীয় টিকেট নিয়ে তিনি পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর ক্রমান্বয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। পৌরসভার মূল ফটকে এক বিএনপি নেত্রীর ৬ শতাংশ জায়গা জবর দখল করে তাতে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেন। ২০১৮ সালে বিতর্কিত এই আওয়ামীলীগ নেতা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার মার্কেটসহ মাদ্রাসা ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সাথে আতাত করে গভর্নিং বডির শিক্ষানুরাগী সদস্য পদটি ভাগিয়ে নেন। তার অনুসারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রুহুল আমিন মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে।এ ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে শিক্ষার্থীর পরিবার। ৩০ মার্চ সকালে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে সোনাগাজী জিরো পয়েন্টে আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর মকসুদুল আলমের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় অপর কাউন্সিলর শেখ মামুনের নেতৃত্বে অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মাঝে মারামারি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

যৌন নির্যাতনের মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল ওই শিক্ষার্থীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে চার মুখোশধারী। এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ৪নং এজাহার নামীয় আসামী ও ঘটনার পরিকল্পনারকারীদের অন্যতম হিসেবে এই কাউন্সিলরের নাম বেশ আলোচিত-সমালোচিত হয়। এর পরেও স্বীয় পদে বহাল থাকায় এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, প্রভাবশালী এ আওয়ামীলীগ নেতা নুসরাতের ঘটনায় সরাসরি জড়িতসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে তার সখ্যতা থাকায় এখনো স্বীয় পদে বহাল রয়েছে। যা খুবই দু:খজনক।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম জানান, নুসরাতের ঘটনায় দলীয় যেসব নেতাকর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!