ফেনী
সোমবার, ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:১৭
, ১১ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

কোন পথে চীন………!

নাজিম সরকার– চীন আগামীর পরাশক্তি, তাই এখনই বিশ্বের নিয়ন্ত্রন নিতে একই সাথে চীন সাগর, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ভারত মহাসাগরে সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। তাই প্রতিবেশী ৩০টি দেশের সাথেই চীনের দ্বন্ধ। . অথচ ১৮৮০সালে আমেরিকা ব্রিটেনকে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হয়। 

সুপার পাওয়ার হতে আরো ৭০বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল আমেরিকাকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর ১৯৯১ সালে আমেরিকা একক সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আমেরিকা সবসময়ই নিজের সুপ্রিম পাওয়ার প্রতিবেশি দেশ সমুহের সাথে খাটায় না। এবংকি চরম অবাধ্য কিউবার বিরুদ্ধেও না। বরং একক পরাশক্তি হয়েও ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অন্য দেশের সাথে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখে।

 অথচ মাত্র ৫বছরেই চীন অর্থনৈতিক পরাশক্তি থেকে পটেনশিয়াল পরাশক্তি হতে উঠেপড়ে লেগেছে। একই সাথে জাপান, ভারত, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার মত উদীয়মান দেশসমুহ এর সাথে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে। কোন প্রকার বাছবিচার ছাড়াই বিভিন্ন দেশের একনায়কদের সমর্থন দিয়ে চলেছে। আফ্রিকা, মায়ানমান কিংবা উত্তর কোরিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে নীরবে গনহত্যাকেও সাপোর্ট দিচ্ছে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা সামরিক কোন দিকেই আমেরিকার সমতুল্য না হয়েও সর্ব ক্ষেত্রে আমেরিকার বিরোধিতা করেই একবিংশ শতাব্দীর পরাশক্তি হবার স্বপ্নে বিভোর তারা।

বিশ্বব্যাপী ইউরোপীয় কলোনি যুগের অবসান ঘটে জার্মানীর আগ্রাসনের মুখে যখন ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন নিজেদের দেশ বাচাতে আমেরিকা এবং রাশিয়ার সহযোগিতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। ফলে বিশ্বব্যাপী ইউরোপীয় কলোনী যুগ তথা ইউরোপীয় পরাশক্তির অবসান ঘটে। নতুন দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উদ্ভব ঘটে।অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করলে জার্মানীই হতো পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার। কিন্তু ৭০বছর ধরে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়েও আমেরিকা বিশ্বব্যাপী নিজেদের কর্তৃত্ব নিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল, যখন ব্রিটেন নিজেদের বিশ্বব্যাপী কলোনির পরিবর্তে শুধু নিজ ভুখন্ড বাচাতে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছিল। জার্মানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু না করলে এবং জাপান নিজ থেকে পার্ল হারবার আক্রমন না করলে হয়তো আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াতোই না। 

যে সময়ে পৃথিবীব্যাপী ইউরোপীয় কলোনী যুগ চলছিল, সে সময়ে পৃথিবীতে ৩টি নতুন পরাশক্তির উদ্ভব ঘটল; আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জার্মানী। আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন নিজেদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং রাজনীতি সমৃদ্বশালী করনে ব্যস্ত ঠিক তখনই জার্মানী বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি ও হিটলারের সামরিক শক্তির জোরে বিশ্বের নিয়ন্ত্রন নিতে চাইল। ফলে লাভ হল আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের, বিশ্বে নিয়ন্ত্রন চলে গেল তাদের হাতে। ইউরোপীয় শক্তি হারালো বিশ্বব্যাপী তাদের কর্তৃত্ব। আর জার্মানী পেল বিভক্ত দেশ….। 

বর্তমান ইউনিপোলার পৃথিবীতে আমেরিকাই একমাত্র পরাশক্তি এবং ইউরোপ তাদের সহযোগী। একই সাথে নতুন অর্থনৈতিক এবং পটেনশিয়াল ৬টি সুপার পাওয়ার বিশ্বে বিদ্যমান; রাশিয়া, ইউরোপ, ব্রাজিল, ভারত, আমেরিকা ও চীন।

এখন প্রশ্ন হল, চীন কি জার্মানী হতে চায়। যারা সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির দাপটে অন্ধ হয়ে রাতারাতি বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখেছিল। নাকি আমেরিকা কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়ন হবে যারা ধৈর্য্য সহযোগে বিশ্বব্যাপী নিজেদের অবস্থান সৃষ্টি করেছিল। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন পারে পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনতে, তেমনি পারে চীনকে একক সুপার পাওয়ার বানাতে। কিংবা চীনের বর্তমান উদ্ধতস্বভাব হয়তো কপাল খুলে দিতে পারে ভারত কিংবা রাশিয়ার।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!