ঢাকা শহরে যে পরিমাণ করোনা পরীক্ষা হচ্ছে তার চেয়ে কম হচ্ছে ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলাগুলোতে। ঢাকার চেয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতেও তুলনামূলক কম পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা কম হলেও ঢাকার বাইরে রোগী শনাক্তের হার অনেক বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরীক্ষা বাড়ালে আরো বেশি রোগী শনাক্ত হবে ঢাকার বাইরে। ঢাকার বাইরে প্রতি প্রায় ৫ জনে একজন করে করোনার রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, ঢাকা সিটিতে প্রতি ১২ জনে একজন করোনার রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। গত ১৭ই মে পর্যন্ত ২১টি ল্যাবে ঢাকা সিটিতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মোট এক লাখ ১৫ হাজার ৪১৫টি। রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫৬৫ জন।
অন্যদিকে, ঢাকা সিটির বাইরে সারা দেশে ২১টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৯৩টি। এতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭০৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ১৭ই মে পাঠানো পরিসংখ্যনে এই চিত্র দেখা গেছে। পরের দুই দিনের প্রতিবেদনেও এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ঢাকার বাইরে শনাক্তের হার বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাইরে নমুনা সংগ্রহের মান অনেক ভাল। কারণ নমুনা সংগ্রহকারীরা বুঝে শুনে নমুনা সংগ্রহ করছেন। ঢাকা সিটিতে নমুনা সংগ্রহের মান নিয়ন্ত্রণ অতো ভাল নয়। ঢাকায় নমুনা সংগ্রহ অনেক বাদ যাচ্ছে। তিনি বলেন, টেস্ট করা সহজ। অন্যদিকে, গুণগত নমুনা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। করোনার টেস্ট ঢাকা ও ঢাকার বাইরে উভয় জায়গাতেই বাড়াতে হবে বলে এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলাতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে সর্বশেষ এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশে ৮ই মার্চ প্রথম তিন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এই তিন জনের দু’জন ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন। তাদের মাধ্যমেই তৃতীয় ব্যক্তির সংক্রমণ হয়। এই তিন জনই নারায়ণগঞ্জের। এরপরই ঢাকা মহানগরীতে কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হতে থাকে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ১৭ই মে পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়, দেশে ২২ হাজার ২৬৮ জন করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৬৫ জন ঢাকা সিটিতে। যা মোট আক্রান্তের ৫৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় শনাক্ত ৩,৩৬৮ জন। মোট শনাক্তের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে মোট আক্রান্ত ১,৬৪৪ জন। যা আক্রান্তের ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ২৪৫ জন। যা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ৫২৫ জন। শতকরা ৩ দশমিক ১৫ ভাগ। খুলনা বিভাগে ৩৫১ জন। মোট শনাক্তের ২ দশমিক ১১ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৬৫ জন শনাক্ত। যা শনাক্তের ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ১৬১ জন আক্রান্ত। যা শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ২৪৬ জন করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যা মোট আক্রান্তের ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ ভাগ পুরুষ এবং ৩২ ভাগ নারী। বয়স ভিত্তিক দেখা গেছে তরুণ ও যুবকরা বেশি। তারা ৬৪ শতাংশ। ২১-৫০ বছরের বয়সীদের মধ্যে এ চিত্র দেখা গেছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন, ২৫ হাজার ১২১ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭০ জনে।