বিশেষ প্রতিনিধিঃ ফেনীতে নজির আহম্মদ ব্রিকসের বিরুদ্ধে খাল দখল করে ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের কৃষি জমি গুলো আবাদ করা যাচ্ছেনা।অন্যদিকে ফসলী জমির মাঠি কেটে ইটভাটায় জমা করে রাখা হচ্ছে।কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে চালু করা হয়েছে নজির আহম্মদ ব্রিকস।
উল্লেখিত আইনবিরোধীকার্যক্রমের কারনে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন বেশ কয়েকটি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করেছে।কিন্তু রহস্যজনক কারনে নজির আহম্মদ ব্রিকসের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি স্থানীয়দের অভিযোগ ।
সুত্র জানায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের ছাগলনাইয়া উপজেলার অন্তর্গত পুরাতন মুহুরীগঞ্জ বাজারের মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ৫ বছর আগে প্রায় ৮ থেকে ১০ একর জমিতে নজির আহম্মদ ব্রিকস ম্যানুফেকচারিং এর যাত্রা শুরু হয়। বিধিমোতাবেক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে ইটভাটা চালু করার কথা থাকলেও এ যাবত পর্যন্ত তা না নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তারা।
স্থানীয় ইউপি সাবেক সদস্য শাহাদাত হোসেন মিন্টু অভিযোগ করে জানান, পানি নিষ্কাসনের জন্য ইটভাটার মাঝখান দিয়ে বদর মোহন নামে একটি খাল অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু সেটির প্রবেশ মুখে বাঁধ দিয়ে ক্রমান্বয়ে তা ভরাট করে নিয়েছে নজির আহম্মদ ব্রিকস। ফলে অল্প বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাসন না হওয়ায় আশপাশের কৃষি জমি গুলোতে আবাদ করা যায়না। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। বিষয়টি ব্রিকস মালিকদের কাছে এলাকাবাসী বলার পরেও তারা স্থানীয় কিছু নেতাদের ম্যানেজ করে খাল ভরাট করে আসছে।
ছাড়পত্র ব্যতীত নজির আহম্মদ ব্রিকস ইটভাটার কাজ চালিয়ে আসছে বলে সত্যতা স্বীকার করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফয়জুল কবির জানান, তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি।
স্থানীয়রা বলছেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারনে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। এছাড়া ইটভাটার মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাকের নিয়মিত যাতায়াতের কারনে শহীদ আব্দুল ওয়াদুদ সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনসাধারণকে চরম ভোগান্তীর স্বীকার হতে হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে ফেনীতে ইটভাটার সংখ্যা রয়েছে ১ শ ৫টি। এসব ইটভাটায় বছরে প্রায় দেড় কোটি টন মাটি লাগে, এজন্য বছরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। জমির মালিকরা মাত্র ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির মধ্যে থাকা জমির খাদ্যকণা ও জৈব উপাদান নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওই সব জমির উর্বরতা হ্রাস পায়, তাতে যে ফসল আবাদ হয় তার উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও জমির উপরিভাগ মাটি কাটার ফলে জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে ওই সব জমিতে ধান রোপণ করা যাচ্ছে না।
ইটভাটায় ব্যবহত ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারনে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের রোগ ব্যাধির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানান সজিব নাথ নামের এক ভুক্তভোগী।
স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান জানান, পার্শ্ববর্তী জমি কেটে ফেললে জমিতে পানি ধরে রাখার স্বার্থেই তাদের জমি কেটে সমান করতে হচ্ছে। বর্তমানে জমি নিচু হয়ে যাওয়ায় ধান হয় না । শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে লোভের কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. খালেদ কামাল বলেন, কৃষি জমির মাটির উপরের সয়েল নষ্ট না করার ব্যপারে সম্প্রতি আমরা সমন্বয় সভা করেছি । মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আছে কৃষি জমি নষ্ট করলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।
স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে নজির আহম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন জানান, আমাদের প্রয়োজনে আমরা খাল সচল রাখবো।টেলিফোনে এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।সুত্র-আজকালের খবর