ফেনী
শুক্রবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:০০
, ২৭শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট গৃহযুদ্ধের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সমৃদ্ধ এশিয়া গড়তে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান ড. ইউনূসের ফেনীতে গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ বাংলাদেশকে করিডোর দিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহবান বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি উত্তরা’র দোয়া ও ইফতার মাহফিল ইয়াং স্টার ক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল ফরহাদ নগর ইউনিয়ন বিএনপির দোয়া ও ইফতার মাহফিল ফসলি জমির মাটিকাটা রোধে গভীর রাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান,এস্কেভেটর-ট্রাক জব্দ বালিগাঁওয়ে প্রতিপক্ষের বাধায় থমকে গেল ব্যবসায়ীর গৃহ নির্মাণ,হামলার অভিযোগ

ফেনীতে শিশু শিক্ষার নামে রমরমা বাণিজ্য চলছে

 

বিশেষ প্রতিনিধি-ফেনীতে অবৈধভাবে শিশু শিক্ষার নামে বাণিজ্য চলছে। প্রতিবছর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই কোন প্রশিক্ষিত শিক্ষক, অবকাঠামো ও খেলার মাঠ। বছরের শুরুতে নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থী সংগ্রহের টার্গেটে কোমর বেঁধে চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচারণায় নামে প্রতিষ্ঠানগুলো। বছর জুড়ে শিশু শিক্ষার নামে প্রতারণা করলেও এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেনী শহরের অলিতে-গলিতে গড়ে উঠছে নানা রকমের ইংলিশ, বাংলা মিডিয়াম নামধারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নকল করে এসব প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে । প্রতিষ্ঠানের নামের পাশাপাশি লেখা হয় স্কুল এন্ড কলেজ। যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। আবার সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ পিস স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ফেনীর প্রেসিডেন্সি স্কুল এন্ড কলেজ নামে প্রতিষ্ঠানটি  অনায়াসে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকায় ভুগছেন অভিভাবকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এসব প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, অবকাঠামো ও খেলার মাঠ নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি বাড়ীর কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়েই শুরু করা হয়েছে কোমলমতি শিশুদের পাঠশালা। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে স্কুল এন্ড কলেজ প্রচার করে পাঠদান করছে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত। এসএসসি পাশ শিক্ষক দিয়ে চলছে শ্রেনী কার্যক্রম। কোন রকম গাদাগাদি করে বসিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে শ্রেনী কার্যক্রম। ফেনী জিলা স্কুল, ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ক্যামব্রিয়ান স্কুল, দারুস ছালাম মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের নাম ও সাইনবোর্ড ব্যবহার করে প্রতারণা করে যাচ্ছে।

এছাড়াও ফেনী পিস স্কুল এন্ড কলেজ নাম পাল্টিয়ে প্রেসিডেন্সি স্কুল এন্ড কলেজ নাম ধারন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন অমান্য করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

সূত্র জানায়, ফেনী সদর উপজেলায় ১৬২টি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই অনুমোদনহীন। তারপরও অদৃশ্য কারনে এসব সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।

জয়নাল আবেদীন নামের এক অভিভাবক জানান, ফেনীতে তার এক আত্মীয়ের অনুরোধে ৩ সন্তানকে একটি স্কুলে  ভর্তি করান। তিনি ভর্তিকালীন ২ জনের জন্য ২৫ হাজার টাকা ওই প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করেন। কিন্তু কয়েকমাস পর জানতে পারেন স্কুলটির শিক্ষকদের মধ্যে ৩ জন রয়েছেন এসএসসি পাশ। তাদের মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা করে। কোন রকম প্রাইভেট টিউশন করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা আয় রোজগার করে থাকেন। শ্রেনী কার্যক্রমেও নেই তাদের কোন প্রশিক্ষন বা অভিজ্ঞতা। এসব কিছু জানার পর তিনি নিরুপায় হয়ে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তার সন্তানদের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে ভর্তি করান। ওই বছরেই স্কুলটি নীট লাভ করে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। এভাবেই চলছে ফেনীর অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষা বাণিজ্য।

সূত্রে আরও জানা গেছে, কয়েক বছর আগে শহরের জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা নামে পরিচিত ফালাহিয়া মাদ্রাসা রোডে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দোতলা ভবনে ফেনী পিস স্কুল এন্ড কলেজের  কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকে তারা স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহলের সন্তানদের শিক্ষার্থী হিসেবে টার্গেট করে। এতে ব্যাপক সাড়াও পায়। পরে ফেনী পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাসহ আওয়ামীলীগের অনেক স্থানীয় নেতার সন্তানেরা  স্কুলটিতে ভর্তি হয়। একই সঙ্গে তারা জেলার প্রায় সব জায়গায় পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড স্থাপন করে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপক প্রচারণা চালায়। পিস স্কুল তথা প্রেসিডেন্সি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, গত ৫ বছর যাবত তারা একটি ঝুঁিকপূর্ণ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। স্কুলটিতে নেই কোন শরীর চর্চার স্থান। পর্যাপ্ত স্থান নেই শ্রেনী কক্ষ গুলোতে । কোন রকম গাদাগাদি করে  চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। শ্রেনী কক্ষে নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা।

 

আকবর নামে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, জাকির নায়েক পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল পিস টিভির নামানুসারে স্কুলটি স্থাপিত হলেও এর গোটা নিয়ন্ত্রণই ছিল জামায়াত নেতাদের। স্কুলে কী পড়াশুনা করানো হতো তা নিয়ে শুরু থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ ছিল। তবে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের সন্তানেরা স্কুলটির শিক্ষার্থী হওয়ায় স্থানীয়রা এ নিয়ে কথা বলার সাহস পেত না।পরে সরকার কর্তৃক পিস স্কুল কার্যক্রম চালনোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. হানিফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় যে, ম্যানেজিং কমিটির এক বিশেষ সভায় সবার সম্মতিতে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর কিছুদিন পর সাইনবোর্ড ও নাম পরিবর্তন করে পূর্বের ন্যায় তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বর্তমানে এটি প্রেসিডেন্সি স্কুল এন্ড কলেজ নামে পরিচিত। জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা অনুসারে স্কুলের সব ব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের ঠিক রেখে শুধু নাম পরিবর্তন করে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াকে ফেনীবাসী প্রতারণা মনে করছেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউদ্দিন জানান, বিষয়টির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় বলেন, এসব বিষয়ে আমি অবগত নই। পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে তিনি জানান।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন

ফরহাদ নগর ইউনিয়ন বিএনপির দোয়া ও ইফতার মাহফিল
ফসলি জমির মাটিকাটা রোধে গভীর রাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান,এস্কেভেটর-ট্রাক জব্দ
বালিগাঁওয়ে প্রতিপক্ষের বাধায় থমকে গেল ব্যবসায়ীর গৃহ নির্মাণ,হামলার অভিযোগ
বিশিষ্টজনদের মিলনমেলায় পরিণত রামপুর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবের দোয়া ও ইফতার
ফসলি জমির মাটি সংগ্রহ করায় ধলিয়া ব্রিকস’র ৩ লাখ টাকা জরিমানা,কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা
লেমুয়ায় অবৈধ বালু উত্তোলনকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের হানা, ৪ জনের কারাদণ্ড
ফরহাদনগরে ছাত্রদলের ইফতার ও দোয়া মাহফিল
লেমুয়ায় সমন্বয়ক পরিচয়ে রাতের আঁধারে বাড়িতে তল্লাশি, ৫ যুবককে ধরে পুলিশে দিল এলাকাবাসী

Logo
error: Content is protected !!