ফেনী
মঙ্গলবার, ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:১০
, ১২ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ফেনীর ছেলের বিশ্বজয়ের গল্প

নাজিম সরকার-চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ২০০৫ সালে ডিপ্লোমা পাস করা ছেলেটি এখন ব্রিটেনের বিখ্যাত ক্রানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের রিসার্চ ফেলো। পলিটেকনিক এবং ডুয়েট ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে যারা হীনমন্যতায় ভোগেন, তাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরনের একটি ড. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পলিটেকনিক থেকে রেকর্ড জিপিএ নিয়ে মেকানিক্যালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই ডুয়েটে সুযোগ পান এবং ডুয়েট থেকেও ২০১০ সালে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং অনার্স সিজিপিএ নিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক শেষ করেন। এরপর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে। কিছুদিন পরেই ইজিসিবি তে সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পান। নিয়োগের কিছুদিন পরেই ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্মাল পাওয়ার ও ফ্লুইড ইঞ্জিনিয়ারিং ফুল স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সুযোগ পেলে চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে চলে যান ব্রিটেনে। ১ বছর পরে ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেই দেশে এসে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই ব্রিটেনের কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট-এ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ফুল স্কলারশিপ এ পিএইচডি করার ডাক পান।
কুইন্স ইউনিভার্সিটি, বেলফাস্ট থেকে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে পিএইচডি সম্পন্ন করে বেডফোর্ডের ক্রানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের  ইন্ডাস্ট্রিয়াল এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের  রিচার্স ফেলো হিসেবে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি Optimising Energy Management in Industry (OPTEMIN) প্রকল্পে গবেষনারত আছেন।  ব্রিটেনের কলকারখানা সমুহের কার্বন নিঃসরন কমাতে কাজ করছে লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়, বেলফাস্টের কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেডফোর্ডের ক্রানফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ এই প্রকল্প। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক। ১৯৮৫ সালে ফেনী জেলার নৈরাজপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করে ২০০১ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে ভর্তি হন। ছোটবেলাতেই বাবা মাকে হারিয়ে বড়বোন এবং বড়ভাইয়ের আদরে মানুষ হয়েছেন। ডিপ্লোমাতে অসামান্য ফলাফলের জন্য তিনি ন্যাশনাল মেরিট অ্যাওয়ার্ড ‘০৬, ডুয়েটে কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রপতি গোল্ড মেডেল, ম্যানচেস্টারে আউটস্ট্যান্ডিং ফলাফলের জন্য ডিন’স অ্যাওয়ার্ড’১৩ পুরষ্কারে ভুষিত হন। তার জীবনের উন্নতির পথে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তার বড় বোন ও বড় ভাই, পলিটেকনিক ও ডুয়েট এর কিছু বড় ভাই  ও শিক্ষকরা (যেমন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিন, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব, ভিসি প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান, প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান)।
অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রম থাকলে যেকোন পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে থেকেও সাফল্যের শীর্ষে আহরন করা যায়, এর বাস্তব উদাহরন ড. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি মনে করেন ব্যাক্তি জীবনে ক্যারিয়ার ও ইসলামের ভারসাম্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন| তিনি আরো বলেন “তরুণ ও যুবক বয়েসে ইসলামিক জীবনযাপন একদিকে যেমন স্পিরিচুয়ালি লাভবান তেমনি ক্যারিয়ার গঠনের জন্যও সহায়ক”। উনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব শায়খ ড. ইয়াসির কাধি, (ইসলামিক স্কলার), রেসেপ তাইয়েব এরদোগান (রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব) এবং প্রিয় শখ- ঘুরে বেড়ানো ।
তরুন সমাজের উদ্যেশ্যে তিনি বলেন, “দুনিয়ায় সফলতার চাবিকাঠি হল: নিজের প্রচেষ্টা ও ডিটার্মিনেশন এবং তার সাথে আল্লাহ’র রহমত। তবে এই দুনিয়া’র সফলতায় আমাদের মেইন টার্গেট হওয়া উচিত নয়, বরং আখিরাতের সফলতাই আসল এবং যারা এই আখিরাতের জন্য চেষ্টা করবে আল্লাহ দুনিয়াতে ও তাদের লক্ষ্যে পৌছে দিবেন।
.
তাই হতাশা নয়। পরিশ্রম এবং ইচ্ছাশক্তি পারে আপনার সফলতার দ্বার খুলে দিতে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!