ফেনী
বৃহস্পতিবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৯:৪১
, ৬ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
সংস্কার ধোঁয়া তুলে ষড়যন্ত্র করা হলে দেশের সমস্যা বাড়তে থাকবে সোনাগাজীতে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল নেতার পরিবারকে বাড়ি উপহার দিলেন তারেক রহমান চাঁদাবাজি করলে শহীদদের রক্তের অসম্মান হবে সংসদের উচ্চকক্ষে সখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত হবে না ইসলামি আন্দোলন ফেনীর কমিটি গঠন,সভাপতি এনাম- সেক্রেটারি একরাম ১৪ ফেব্রুয়ারি পবিত্র শবে বরাত সামাজিক পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ফেনীর কমিটি ঘোষণা রাজাপুরে হিলফুল নূর ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র উপহার ফেনীতে বর্নাঢ্য আয়োজনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ফেনী বড় মসজিদের এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আ.লীগ আবার ফিরবে,জয়বাংলা

ফেনী সরকারি কলেজে বছরে কোটি টাকা লুটপাট

 

আরিফ আজম-ফেনী সরকারি কলেজে বিভিন্ন সময় ভর্তি ও ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। নামে-বেনামে একাধিক খাতে প্রতিবছর আদায়কৃত কোটি টাকা হরিলুট হচ্ছে। স্বয়ং অধ্যক্ষ সহ একটি দুষ্টচক্র এ লুটপাটে জড়িত থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেন না।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেলার শত বছরের প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ ফেনী সরকারি কলেজে ২১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনী ছাড়াও ৭টি বিষয়ে মাষ্টার্স, ১০টি বিষয়ে মাষ্টার্স (প্রিলি) ও ১৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২ হাজার ১শ আসনে  অনার্স ভর্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি এর সাথে বাড়তি ফি আদায় করা হচ্ছে। বিএ/বিএসএস/বিবিএ (অনার্স) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার ১শ ৬৫ টাকা এবং বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৬ হাজার ২৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। ব্যাংক পে-অর্ডারের মাধ্যমে উল্লেখিত টাকা আদায় হলেও তা ব্যাংকে জমা হওয়ার পর কলেজের খাত ভিত্তিক বিভিন্ন হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়।
সূত্র আরো জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কলেজের নিরাপত্তা, নৈশপ্রহরী ও মাষ্টার রোল কর্মচারীর বেতন বাবদ কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যৌক্তিক পরিমাণ টাকা আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ খাতে বর্ধিত ফি আদায় করে থাকে। কলেজ অফিসের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ খাতে বছরে খরচ হয় ১৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কিন্তু ছাত্র প্রতি ৬শ ৫০ টাকা হারে বছরে আদায় করা হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্তি ফি বার্ষিক ৪ লাখ টাকা হলেও এখানে ছাত্রপ্রতি ১শ টাকা হারে ২১ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা প্রায় ২১ লাখ টাকা। পরিবহন খাতেও লুটপাট হচ্ছে ব্যাপক। গত বছরের নভেম্বর থেকে একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্যের মতামত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৩শ টাকা করে আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন স্বয়ং অধ্যক্ষ। এ টাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও ফরম ফিলাপের সময় সংযুক্ত করা হয়। এই খাতে বছরে আদায় হয় প্রায় ৬৩ লাখ টাকা। আদায়কৃত টাকার বৈধতা দেয়ার জন্য গত মাসে ১৭ সিটের একটি বাস ভাড়া নিয়ে ছাগলনাইয়া রুটে চালু করা হয়।
এছাড়া উন্নয়ন খাতে মন্ত্রণালয় নির্দেশিত ২শ টাকা হারে প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে আদায় করা হয়। যার মোট পরিমান দাঁড়ায় ৪২ লাখ টাকা। উক্ত টাকা দিয়ে নামমাত্র কলেজের কিছু উন্নয়ন কাজ করে বাকি টাকা ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়। কলেজে অনুষ্ঠানাদিতে যে পরিমান খরচ হয় তার সাথে ২-৩ গুন বেশি টাকার ভাউচার করে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাত করা হয়।
জানা গেছে, ১৯৯২ সাল থেকে ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এই খাতে জনপ্রতি ২৫ টাকা হারে বছরে আদায় হয় ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিজ্ঞানের ৫টি বিভাগে সেমিনার ফি ২ হাজার ৭শ ও অন্যান্য ১০টি বিভাগে ১ হাজার ৬শ টাকা আদায় করা হলেও সেমিনারে কোন বই দেয়া হয় না। চিকিৎসা ক্ষেত্রে একজন মহিলা মেডিকেল সহকারি চলতি বছর মাস দুয়েক দায়িত্ব পালন করলেও এখন নিয়মিত আসেন না। এই খাতেও জনপ্রতি আদায় করা হয় ২০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, কলেজের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন সম্মানী বন্টনের সময় অধ্যক্ষ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে মনগড়া নীতিমালা অনুযায়ী বন্টন করেন। এনিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ সকল অনিয়মের যাতে অডিট আপত্তি না হয় সেজন্য প্রতিটি বিভাগের সেমিনার ফান্ড থেকে বাধ্যতামূলক নিয়ে গত বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা অডিট কমিটিকে প্রদান করা হয়।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন খাত দেখিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের মাধ্যমে কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ধারাবাহিক অভিভাবক সমাবেশ হলেও ২০১৫ সাল থেকে জবাবদীহিতার ভয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

জানতে চাইলে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দেশের সব কলেজের তুলনায় এ কলেজে কম টাকা নেয়া হচ্ছে। কিছু খাতে টাকা নেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র আর কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। এক্ষেত্রে চাইলে কম নিতে পারব না।’
অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আমি কি করবো এমন প্রশ্ন রেখে অধ্যক্ষ আবুল কালাজ আজাদ আরো বলেন, ‘কলেজে গরীব ও কম বিত্তশালী শিক্ষার্থী রয়েছে। পরিবহনের জন্য কমিটি রয়েছে। কমিটির মাধ্যমে কোটেশন অনুযায়ী বাস ভাড়া নেয়া হয়েছে।’

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo